বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ অপরাহ্ন
ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া:
রাজধানীর পুরানাপল্টনে হাউজ বিল্ডিয়ের পাশের গলিতে একটি সেলুনে নরসুন্দরের সাথে কাজের মধ্যেই খদ্দেরের কথা হচ্ছিল। নরসুন্দরের প্রশ্ন ছিল-‘দেশে কী হতে যাচ্ছে? ভোট কি হবে?’ খদ্দের কিছুক্ষণ চুপ থেকে জবাব দিলেন, ‘দেখেন কী হয়। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’
নরসুন্দর নিজে নিজেই বলেন, ‘ঢাকায় কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের কোনো পোস্টার নেই, কোনো প্রচারণাও নেই। কেবল নৌকার পোস্টার দেখছি। খবরে দেখছি প্রার্থীরাও মার খাচ্ছে। লক্ষণতো ভালো মনে হচ্ছে না। খন্দের আবারো কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলেন, ‘ভোট হলেই হবে। ভোট হলে, মানুষ ভোট দিতে পারলেই হবে।
ভোট হওয়া এবং সুষ্ঠু ভোট হওয়াটাই মূল বিষয়।’ নরসুন্দর সায় দিয়ে বলেন, ‘যার সাথে কথা বলি সেই নির্বাচনে কে জিতবে না জিতবে এগুলো নিয়ে কিছু বলে না, মানুষ কেন্দ্রে যেতে পারবে কি না, সেনাবাহিনী কিছু করবে কি না, দেশে কী হবে- এসব নিয়েই আলোচনা করছে, প্রশ্ন করছে।’ এভাবেই দুজনের মধ্যে কথা চলছিল।
এমন আলোচনা এখন সবত্রই লক্ষ করা যাচ্ছে। চায়ের আড্ডায়, বন্ধু-বান্ধবের আলোচনায় এই ধরনের প্রশ্ন, উদ্বেগ শঙ্কা মানুষের মুখে মুখে। ফেসবুকসহ সোস্যাল মিডিয়ায়ও বিভিন্ন পোস্টের কমেন্টে এমন প্রশ্ন, শঙ্কাই লক্ষ করা যাচ্ছে। পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে এলাকাভিত্তিক ভোটের চালচিত্র নিয়ে প্রতিবেদন, সাক্ষাৎকার ফিচার লক্ষ করা গেলেও সাধারণ মানুষের আলোচনায় ভোট হওয়া-না-হওয়া, ভোট সুষ্ঠু হওয়া-না-হওয়া নিয়ে, দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাওয়া লক্ষ করা যাচ্ছে।
নির্বাচনের তারিখ ক্রমেই ঘনিয়ে আসা সত্ত্বেও নির্বাচনের ফলাফলের চেয়েও নির্বাচন হওয়া-না-হওয়া প্রসঙ্গ, নানা শঙ্কার বিষয়টি সাধারণ মানুষের আলোচনায় স্থান পাওয়ার কারণ কি, জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনের সমতল ভূমি তৈরি করতে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই মানুষের মধ্যে এসব প্রশ্ন ও শঙ্কা বিরাজ করছে। নির্বাচনের মাঠতো একতরফা। এ জন্যই মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপির নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী জোটগুলো বর্জন করেছিল। এমনকি নির্বাচন প্রতিহত করারও কর্মসূচি ঘোষিত ছিল। সেই নির্বাচনে সংসদের ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনাও ছিল। বাকি আসনগুলোতে নির্বাচনের ফলাফল কি হবে তা নিয়ে আলোচনাও স্বাভাবিক কারণেই ছিল না।
কিন্তু এবারের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট এক্যফ্রন্টের নামে আগের চেয়েও অনেক বড় জোট নতুন আঙ্গিকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এই কারণে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এটাই স্বাভাবিক মনে করার কথা ছিল। কিন্তু ভোটগ্রহণের ১১ দিন আগেও মানুষের মধ্যে নির্বাচনের ফলাফল কি হবে তা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাচ্ছে না, প্রাধান্য পাচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া এমন কি ভোট সুষ্ঠু হওয়া না হওয়া নিয়ে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ ব্যাপারে বলেন, এখানে বাড়াবাড়ি হচ্ছে। এখানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মাঠে নামতে দেয়া হচ্ছে না। প্রার্থীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। এটা একটা অসম প্রতিযোগিতা। এ জন্যই মানুষের মধ্যে এ রকম প্রশ্ন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও মহাজোটের নির্বাচনী ইশতিহারের বিষয়গুলোর চেয়েও নির্বাচনের পরিবেশের বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়ার কারণে মানুষ চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। মানুষ যদি ভোটই দিতে না পারে ইশতিহার জেনে কি লাভ হবে।
ইতোমধ্যেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, আওয়ামী লীগ, বিএনপি তাদের নির্বাচনী ইশতিহার ঘোষণা করেছে। নির্বাচনের বাকি রয়েছে আর ১১ দিন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করার ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয় তার ওপর আসন্ন নির্বাচন ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতির নির্ভর করছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। Inqilab